রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত এক নারী মারা গেছেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা নিশ্চিত করেছে।
মারা যাওয়া ওই নারীর বাড়ি নরসিংদীতে হলেও তিনি কিশোরগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। ৯ জানুয়ারি তাঁর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। এছাড়া তিনি ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য একটি সংক্রমণেও আক্রান্ত ছিলেন, যা তাঁর শারীরিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসটি ২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত হলেও বাংলাদেশে এটি ২০১৭ সালে প্রথম ধরা পড়ে।
**লক্ষণ:**
– জ্বর
– সর্দি
– কাশি
– নাক বন্ধ হওয়া
– শরীরব্যথা
এটি সাধারণ ফ্লুর মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে। তবে শিশু, বয়স্ক, ক্যানসার বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি কিছুটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মাধ্যমে নিউমোনিয়াসহ শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এইচএমপিভি সাধারণত একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া, দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর মুখ, নাক, বা চোখে হাত দেওয়া—এসব কারণেই এটি ছড়াতে পারে।
এই ভাইরাসের জন্য আলাদা কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
– **জ্বর:** প্যারাসিটামল
– **সর্দি-কাশি:** অ্যান্টিহিস্টামিন
– নিয়মিত হাত ধোয়া
– মাস্ক পরা
– জনবহুল এলাকায় সাবধানে থাকা
– সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এইচএমপিভি নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেছেন, “এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। এটি পুরোনো ভাইরাস এবং নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।”
সেমিনারে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা জানান, এইচএমপিভি সাধারণ ফ্লুর মতোই একটি ভাইরাস। সচেতনতা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এইচএমপিভি কোনো নতুন ভাইরাস নয়, তবে এটি শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সঠিক উপায়।